গাছে থোকায় থোকায় দুলছে মালটা, কমলা, বাদামি লেবু। এমনই দৃশ্য দেখা গেছে উত্তরের জনপদ ঠাকুরগাঁওয়ের বিভিন্নস্থানে। জেলার সদর উপজেলা, রাণীশংকৈল ও পীরগঞ্জে গড়ে উঠেছে অনেক মাল্টা ও কমলার বাগান।
এ যেন এক মনোমুগ্ধকর দৃশ্য। দেখলেই যেন চোখ জুড়িয়ে যায়। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ মাল্টা বাগান দেখতে আসছেন এখানে।
এমনি একটি বাগানের মালিক রানীশংকৈল উপজেলার নেকমরদ করনাইট নতুন বাড়ি গ্রামের কৃষক মাহমুদুল হাসান মুকুল। কৃষক মাহমুদুল হাসান মুকুল জানান, তিনি সর্বপ্রথম বাগানে ২টি কমলা গাছ লাগান। এতে তেমন কোন ফলাফল না পাওয়ায় তিনি ২০১৫ সালে রাণীশংকৈল উপজেলা কৃষি অফিসে যোগাযোগ শুরু করেন। আগ্রহ দেখে কৃষি বিভাগ তাকে মাল্টা-কমলা চাষের প্রশিক্ষণ শেষে বারি মাল্টা-১ জাতের ৮০টি, ছয়টি কমলা লেবু, ১২টি কলম্ব লেবু, ১০টি বাতাবি লেবুর চারা দেন। পরে তিনি চারাগুলো বাড়ির পেছনের চল্লিশ শতক জমিতে রোপণ করেন। গাছ লাগানোর তিন বছরের মধ্যে তার বাগানের তিন চতুর্থাংশ গাছে থোকায় থোকায় মাল্টা, কমলা এবং লেবু ধরতে শুরু করে।
আরও পড়ুন: আবাদ মৌসুমে সারের দাম বৃদ্ধি, ফরিদপুরে আমন উৎপাদনে শঙ্কিত চাষিরা
২০১৯ সালে তার বাগান থেকে প্রথম ১২ হাজার টাকা আয় করেন। পরের বছরে ২০২০ সালে তাকে আর পিছনে ফিরে থাকাতে হয়নি। এবছর সব খরচ বাদ দিয়ে ৯০ হাজার টাকা আয় করতে পারবেন বলে ধারণা করছেন তিনি।
সরেজমিনে কথা হয় একই ইউনিয়নের কুমরগঞ্জ গ্রামের আরেক মাল্টা চাষী শিক্ষক সাদেকুল ইসলামের সাথে। তিনি জানান শিক্ষকতার পাশাপাশি ছয় বিঘা জমিতে তিনি মাল্টা আবাদ করেছেন। প্রতি বিঘা জমিতে একশত করে মাল্টা গাছ রোপন করেছেন। তার দুই একর জমিতে এবার ৫০ মনের অধিক মাল্টা উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছেন। এবারই প্রথম পর্যায়ে দেড় লক্ষ টাকার মত বাগানের মাল্টা বিক্রি করবেন বলে আশা করেছেন। উৎপাদিত ফল জেলার চাহিদা পূরণের পাশাপাশি দেশের অন্যান্য স্থানেও পাঠানো হচ্ছে বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন: সৌদি খেজুর চাষে সফল চাঁপাইনবাবগঞ্জের রুবেল
অপরদিকে তার মাল্টার পাশাপাশি প্রায় এক একর জমিতে ২০০ টি কমলালেবু ও ১০০ টি ড্রাগন গাছও রয়েছে। যা থেকে পরবর্তীতে বাগান পরিচর্যার মাধ্যমে আরও বেশি সাফল্যের আশা করছেন।
লাভজনক হওয়ার কারণে দিন দিন মাল্টার চাষে ঝুঁকছেন স্থানীয় কৃষকরা।
কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্র জানায়, রাণীশংকৈল উপজেলায় নতুন পুরাতন বাগান মিলে ১৬ হেক্টর জমিতে মাল্টা চাষ হয়েছে। অনেকে আগ্রহী হয়ে নতুন মাল্টা বাগানের কাজ শুরু করেছেন।
আরও পড়ুন: বারোমাসি থাই আম চাষে সাফল্য
রাণীশংকৈল উপজেলা কৃষি অফিসার সঞ্জয় দেবনাথ জানান, আবহাওয়া ও মাটি চাষের উপযোগী হওয়ার কারণে ভালো ফলন পাচ্ছেন বাগান মালিকরা। স্থানীয় বাজারে গত কয়েক বছর থেকে এখানকার উৎপাদিত কমলা ও মাল্টা পাওয়া যাচ্ছে। মান ভালো হওয়ায় চাহিদাও রয়েছে স্থানীয় বাজারে।